Monday, August 6, 2012

ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ই-গভর্ন্যান্স প্রশিক্ষণ কর্মশালা¾ উদ্বোধন অনুষ্ঠান ভাষণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪১৬, ৩১ অক্টোবর ২০০৯
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অনুষ্ঠানের সভাপতি, সহকর্মীবৃন্দ,অংশগ্রহণকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ।
আসসালামু আলাইকুম।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ই-গভর্ন্যান্স প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের Access to Information প্রকল্পের অধীনে যে বিষয়ে আপনাদের প্রশিক্ষণ শুরু হতে যাচ্ছে সেটি ব্যক্তিগতভাবে আমার অত্যন্ত প্রিয় বিষয়। আমি বিশ্বাস করি, একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বায়নের এই সময়ে এবং সামনের দিনগুলোতে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে ব্যাপকভাবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।
আগামী ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হবে। ২০২০ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এ সময়ের মধ্যে আমরা দেশ থেকে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অশিক্ষা দূর করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করে জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণ করব ইনশাআল্লাহ।
এ জন্যই আমরা এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ভিশন ২০২১ ঘোষণা করেছি। আমরা একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চাই। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ, আধুনিক ও কল্যাণরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
সুধিমন্ডলী,
আমাদের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে দু-একটি কথা বলতে চাই। অনেকের এ সম্পর্কে ভুল ধারনা রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ মানে শুধু সর্বত্র কম্পিউটার ব্যবহার নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচনসহ সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রযুক্তির লাগসই প্রয়োগের একটি আধুনিক দর্শন। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন মানসিকতার পরিবর্তন, ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ, উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োগ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ দর্শনের মূল বিষয় হচ্ছে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং সর্বোপরি সরকারি সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া। এসব কাজের একটিই লক্ষ্য। তাহল - সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনমানের উন্নয়ন করা।
আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিকের এবং এখানে কোন ‘প্রযুক্তি বিভেদ' থাকবে না। এজন্য  আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশনের চারটি উপাদানকে অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছি। এগুলো হচ্ছে: মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনগণের সংযুক্তি, জনগণের সেবা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। সুধিবৃন্দ,
আমরা জানি শিক্ষার হার না বাড়ালে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না। এজন্য ২০১০ সালের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০০ শতাংশ ভর্তি নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের দেশকে সম্পূর্ণ নিরক্ষরতামুক্ত করা হবে। চলতি বছর থেকে আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করতে যাচ্ছি। সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এর আওতা বৃদ্ধি করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হবে যাতে আমাদের সন্তানরা প্রযুক্তির সুবিধা শুরু থেকেই পেতে পারে। সুধিবৃন্দ,সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আনায়ন এবং কাজের গতি বাড়ানোর জন্য তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। আমরা গোটা প্রশাসনযন্ত্রকে ই-গভর্ন্যান্সের আওতায় আনতে চাই। ইতোমধ্যে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে দ্রুততার সাথে এ কাজ চলছে। আইন-মন্ত্রণালয় প্রচলিত আইনগুলো হালনাগাদ করে ‘বাংলাদেশ কোড এবং ল'জ অব বাংলাদেশ' ওয়েবসাইট খুলেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি রেকর্ড ডিজিটাইজড করা হচ্ছে। আপনারা জানেন, দেশের বেশির ভাগ মামলা-মোকর্দ্দমার মূল কারণ জমিজমা-সংক্রান্ত্র বিরোধ। দুর্নীতির সুযোগও এখানে বেশি। কিন্তু একবার ডিজিটাইজড হয়ে গেলে কেউ সহজে আর রেকর্ডের জালিয়াতি করতে পারবে না।
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনায়ন ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ঢাকা কাস্টমস হাউসকে অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। আমার জানামতে সবগুলো মন্ত্রণালয়ের এবং বিভাগের ওয়েবসাইট আছে। কিন্তু শুধু ওয়েবসাইট থাকলেই চলবে না। সবাইকে আহবান জানাব আপনারা নিয়মিত ওয়েবসাইটগুলো আপডেট করুন।আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি অচিরেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু করব। আমার বিশ্বাস, এটা চালু করলে টেন্ডারবাজি চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। জনগণের সর্বোচ্চ সেবার জন্য আমরা যা যা প্রয়োজন সবকিছু করব। তথ্য প্রাপ্তি সহজলভ্য করার জন্য আমরা তথ্য অধিকার আইন পাশ করেছি। এর ফলে প্রতিটি অফিস-আদালত জনগণের চাহিদা অনুযায়ী তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে।
সুধিমন্ডলী,
ডিজিটাল বাংলাদেশে সকল তথ্যে ও তথ্য প্রযুক্তিতে জনগণের প্রবেশাধিকার থাকবে। পাশাপাশি সিংহভাগ জনগণ যাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবন-জীবিকা ভিত্তিক তথ্য ও সেবা পেতে পারে এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র (ইউআইএসসি) প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০টি ইউনিয়নে এ তথ্য কেন্দ্র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও এক হাজার তথ্য কেন্দ্রের কাজ চলছে। এসব কেন্দ্র শুধু শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য নয়, বরং শিক্ষাবঞ্চিত জনগণের জন্য অডিও-ভিডিও ও ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। বেশ কিছু বেসরকারি উদ্যোক্তাও এজাতীয় গণতথ্যকেন্দ্র চালু করেছে। যা তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার কাজকে আরও সহজ করবে।
তবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সকল উদ্যোগ কেবলমাত্র কম্পিউটার কেন্দ্রিক নয়। যে সকল প্রযুক্তি ইতোমধ্যেই জনগণের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে - যেমন মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি - এ ধরনের সকল মাধ্যমের সর্বোত্তম ব্যবহারও নিশ্চিত করা হবে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সরকারি সেবা বিতরণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মোবাইল ভিত্তিক ও অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। অচিরেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকারি লেনদেন ব্যবস্থা সহজীকরণ ও স্বচ্ছতা আনয়ন করা সম্ভব হবে।
প্রিয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ,
আপনারা প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। সরকারের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যেতে হয়। তাঁরা অনেকক্ষেত্রে প্রশাসনের কাছে পৌঁছতে পারে না। তাই প্রযুক্তি সহজলভ্যকরণ ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে জনগণ থাকবে চালকের আসনে, প্রশাসনের লক্ষ্য হবে জনসেবা। প্রশাসনের সেবাসমূহ জনগণের সুবিধা অনুযায়ী, কম খরচে, দ্রুততার সঙ্গে ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
এ লক্ষ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমপক্ষে একটি করে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। বেশ কিছু সেবা এই ব্যবস্থার আওতায় এসেছে। যেমন, এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেনের আসন বিষয়ক তথ্য জানা যায়। শীঘ্রই মোবাইলের মাধ্যমে যাতে টিকেট কিনতে পারা যায় সে কাজ চলছে।
কৃষি, স্বাস্থ্য ও পরিসেবা খাতে স্বল্প পরিসরে হলেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ই-সেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে যাতে জনগণ সহজে জরুরি চিকিৎসা পরামর্শ পেতে পারেন। এছাড়া সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের কাছে কৃষি তথ্য ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। দেশে ইতোমধ্যে টেলিমেডিসিনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আমরা মনে করি ই-গভর্ন্যান্স কার্যকরভাবে চালু করতে হলে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ই-গভর্ন্যান্স সেল ও একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের আওতায় সকল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ই-গর্ভন্যান্স বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এবার আপনাদের অর্থাৎ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আপনারা প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে গিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় কীভাবে
সহজে সেবা পৌঁছে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিবেন - এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রিয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ,
সরকারের দায়িত্বভার নেওয়ার পর আমাদেরকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে বিগত ১০ মাস অতিক্রম করতে হয়েছে। পিলখানায় বিডিআর হত্যাকান্ড, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাত, প্রশাসনে অব্যবস্থাপনা ও স্থবিরতা, বিদ্যুত উৎপাদনে পর্বতপ্রমাণ ঘাটতি ইত্যাদি নানা প্রতিকূলতা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা এসব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি।
বিগত সরকার দুটির রেখে যাওয়া আকাশচুম্বী দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এনেছি। উৎপাদন বৃদ্ধি ও লোড ম্যানেজম্যান্টের মাধ্যমে বিদ্যুত পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন ভাল। সামনের দিনগুলোতেও সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে।
মাঠ প্রশাসনের কর্মী হিসেবে আপনাদের সাফল্যের উপরই নির্ভর করছে সরকারের সাফল্য, মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন।
আমি বিশ্বাস করি, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিতে পারে, যে জাতি স্বাধীনতার জন্য ত্রিশ লাখ প্রাণ বিসর্জন দেয়, যে জাতি গণতন্ত্রের জন্য রাজপথ রঞ্জিত করে, সে জাতির জন্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার' লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হতে পারে না।
আমরা সেই বীর জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে, সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালে একটি দারিদ্র্যমুক্ত, সমৃদ্ধ ও অত্যাধুনিক বাংলাদেশ - তথা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা' প্রতিষ্ঠা করবই। এ কাজে আমি আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই।
আপনাদের সবার মঙ্গল কামনা করে আমি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।
খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।বাংলাদেশ চিরজীবী হোক 

No comments:

Post a Comment